বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাফেটারিয়ায়, শাহরীন - আতিকা দু'জন গল্প করছিলো,সামনে ধূমায়িত চা।ক্যাম্পাস জীবনের কতোশতো গল্পের ভীড়ে, ক্লাসবিরতির সময় শেষ হয়ে আসে।সুন্দর আলো করা জীবনের কথা বলে শাহরিন-পড়াশোনা,পরিবার, ভবিষ্যতের কতো পরিকল্পনার কথা, স্বপ্নের কথা ভীড় করে সেখানে।সুন্দর গোছানো পরিবার,স্বামী-সন্তান,দ্বীনিদ্বারিতায় সাজানো সুন্দর আগামীর স্বপ্ন দু'চোখে।নিজেকে প্রতিনিয়ত গড়ে তুলছে, সেরকম করেই প্রত্যাশা আর প্রাপ্তি একই কি সুতায় গাঁথা থাকে! ভিন্নতার সুর সেখানে প্রবল।দীর্ঘক্যাম্পাস জীবনে আড্ডার টেবিলে ব্যক্তির পরিবর্তন হয়,গল্পের পরিসরও বাড়ে অপটু পথচলায়। পড়ন্ত বিকেলে হলের মাঠে বান্ধবীদের গুঞ্জন,ক্লাসমেইট আনজুমানের বিয়ে নিয়ে, আতিকা এসে বসে আড্ডায়।আনজুমানের পরিবার সচ্ছ্বল,বাবা-বড় ভাই দু'জন সরকারী চাকুরে,একমাত্র বড় কন্যাকে বিয়ে দিয়েছেন,অল্পবয়সী সুস্বাস্হ্যের অধিকারী পাত্রের সাথে।আনজুমের পাশে তার বরকে,নাকি বেশ মানায়,সবাই বলছে, মনিকাঞ্চন যোগ, একেই বলে!তবে,ছেলেটি সবে মাস্টার্স শেষ করেছে,চাকুরীজীবনে প্রবেশ করেনি,আনজুমের বাবা, তার শ্বশুর বেশ সহযোগিতা করছেন ওদের।বেশ ভালোই লাগে আতিকার, তরুনীমনে হয়তো অবচেতনে এমন ভাবনা এসেছে আনমনে।কিন্তু,আতিকা জানে তার পরিবার কতো কষ্টে তাকে লেখাপড়া শিখিয়েছে,বাবার একার উপার্জনে, তাদের চার ভাইবোনের সংসার চলতে হিমশিম খেতে হয়,মাকেও প্রচুর কষ্টে সংসার চালাতে হয়।অনেক ইচ্ছাই হয়তো চাপা পড়ে থাকে নিভৃতে।কিন্তু,তাগুতী শক্তি কি নিশ্চুপ থাকে,অনবরত তার প্রচেষ্ঠার বীজ বুনতে থাকে!পারবে কি আতিকা নিজেকে সামলে চলতে! দেড় বছর পরের কথা,বিশ্ববিদ্যালয়ের সেমিস্টার, পরীক্ষা, কর্মব্যস্ততায় দিনগুলো পার হয়ে এসেছে।চিন্তা-চেতনায় পরিবর্তনের ঢেউ লেগেছে আতিকার।অনার্স দ্বিতীয় বর্ষে এসে শাহরিনের বিয়ে হয়ে গিয়েছিলো পরিবারের পছন্দে,আতিকা একটু সার্কেলের বাইরে পড়ে যায়,একাকী অনুসঙ্গে চলনে-বলনে বেশ পরিবর্তন দেখা যায় আতিকার।মূখরা বান্ধবীকে একমুখো সেধিয়ে থাকতে দেখে অবাক হয় শাহরিন।সংসার, পরিবার,পড়াশোনা সামলে বান্ধবীকে সময় দিতে চায়,কিন্তু আগের মতো মনোযোগী পায় না আতিকাকে।ক্লাসের শেষে ওরা দ্বীনি আলোচনা করতো,ভাল বই নিয়ে পাঠচক্র করতো সেখানেও আতিকা তেমন যায় না আজকাল।ক্যাম্পাসেও কখন আসে আবার একাকী চলে যায়।পরিবর্তনটা একটু খাপছাড়া লাগে শাহরিনের, কিছু দূরত্বে চলে আসে বান্ধবী সাথে,তাই সরাসরি কিছু বলতেও পারে না।এমনিই চলছিলো তাদের দিনগুলো। আতিকা এবার ফাইনাল ইয়ারে বাসায়, বিয়ের জন্য বাবা ছেলে পছন্দ করেছেন,তার মত জানতে চেয়েছিলেন।কিন্তু,কোন উপযুক্ত কারন ছাড়াই না করে দিলো সে,প্রাণের সইকেও কিছু বলে না সে।শাহরিনের খালামনি আতিকার জন্য বর দেখেন,সবাই পছন্দ করেন।শাহরিন আতিকার আম্মুকে জানায়ও, এবিষয়ে,কিন্তু আতিকা কেমন রেগে যায়,শাহরিনের সাথে মুখভার।প্রিয় বান্ধবীর বিষয়ে আর আগাতে চায় না শাহরিন,মোনাজাতে শুধু দোয়া করে তার কল্যাণের জন্য। বৃহস্পতিবার। ক্লাসশেষে চলে আসছিলো শাহরিন তাড়াহুড়া করে চলে আসছিলো।দূরে আতিকাকে দেখে কারো সাথে কথা বলছিলো,কিন্তু সে শাহরিনকে ছাড়া কখনো,সে আর ভাবতে পারে না....।রাতে এসে আতিকাকে জিজ্ঞেস করলো এ বিষয়ে,কিন্তু সে এড়িয়ে যেতে চায়। শাহরিন আর কি করবে,জোর করে তো আলাপ চালিয়ে নেওয়া যায় না।ক্লাসে অন্য বান্ধবীদের মাঝে কানাঘুষা হয় আজকাল, কিসব নিয়ে।এসবে কখনো কান দেয়নি সে,আজ যখন আতিকার কথা উঠলো,তখন হঠাত কেন যেন, মনোযোগী হয়।ওরা বলছিলো,আতিকা তার সমবয়সী একজন তরুণকে কথা দিয়েছে,তাদের পরিণয়ের ব্যাপারে,সাথে নাকি, পারস্পারিক দ্বীনি কল্যানেও অঙ্গীকারাবদ্ধ।কিন্তু,সেখানে দুজনই অপরিণামদর্শী,কল্যাণ বা শরীয়াহ লঙ্ঘিত হচ্ছে কি না,সে বিষয় তো উহ্যই রয়ে গেছে!শাহরিন কেমন শিউরে ওঠে,ওদের কথা ভেবে,বারবার পানাহ চায়। তারপরের,সময়গুলো কতো দ্রুত কেটে যায়,ঘড়ির কাটায়।শাহরিন,অন্যান্য বান্ধবীদের বোঝানো সত্ত্বেও,আতিকা সরে আসে না।মাসেক ছয়েক পর,আতিকাকে কেমন এলোমেলো মনে হয়,ক্লাসে ঠিক মতো আসে না,বান্ধবীদের থেকে দূরে,সেমিস্টার ড্রপ দিয়ে একদম গাঁদের বাসিন্দা। শাহরিন কেমন স্হির থাকতে পারে না,বরকে নিয়ে সইয়ের বাড়ি চলে যায়।তখন আতিকার আগের সেই একমুখো ব্যক্তিত্ব আর নেই,কেমন নিঃস্পৃহ চেহারা। সে বললো তার সারকথা হলো,ওয়াদাকৃত ব্যক্তি তাদের মাঝে কৃত ওয়াদা রাখেনি,সে অপর ব্যক্তিকে পছন্দ করে,তার সাথে কোনরকম যোগাযোগ রাখতে চায় না।নিঃশব্দে কাঁদতে থাকে আতিকা,শাহরিন তার মাথাটা কাঁধে রাখে।এমনই একটি নিষ্ঠুর দিন তাদের প্রতীক্ষায় ছিলো, কে জানতো। রাতে বাসায় ফিরে শাহরিনের ঘুম হয় না,মাঝরাতে উঠে ব্যালকনিতে পারচারী করে।কতো এলোমেলো ভাবনা আসো, আনমনেই ভাবে,আতেকার কথা..কতো কল্যাণকর বিয়ের সুযোগ সে উপেক্ষা করেছে,হালাল সম্পর্ক গড়ে সুন্দর দাম্পত্য গড়তে পারতো অনায়াসে।হয়তো আতিকার কোল জুড়ে থাকতো, ফুটফুটে কোন সন্তান তারই মতো। আজ সে নিঃসঙ্গ,বন্ধুহীন,এমন ঝরাগ্রস্ত অবস্থার মাঝে দিনপাত করছে।
সাহিত্য
তনুমনে পরাভব
ব্লগটি লিখেছেন: Farhana
| ২ সেপ্টেম্বার ২০১৮

সকল বিভাগসমুহ:
- মুক্তিযুদ্ধ ও বাংলাদেশ(১৩)
- সাহিত্য(৩৮৪)
- উৎসব(০)
- পরিবার ও আমি (বিয়ে ,দাম্পত্য,শিশু লালন পালন )(১৩৩)
- মেইক ইউরসেল্ফ (রুপচর্চা,পারসোনালিটি,ক্যারিয়ার,স্বাস্থ্য)(১৩৩)
- উইমেন (সামাজিক,মানসিক,সুবিধা বঞ্চিত নারী)(১৭০)
- অনির্ধারিত(১৫৪)
- ইতিহাসের পাতা থেকে(১৭)
- নোটিশ বোর্ড(৬)
- বিবিধ(৩২৪)
- রান্নাবান্না(১০৪)
- ফিল্ম ও মিডিয়া(২১)
- ধর্ম ও গবেষনা(১০৬)
- অনুবাদ(১৬)
- ইন্টারন্যাশনাল উইমেন(৪০)
- বই পরিচিতি/বই রিভিউ(১৭)
- নিউজ(০)
- অপরাজিতা(০)
- নোটিশ বোর্ড(০)
- তথ্যচিত্র(০)
জনপ্রিয় ব্লগসমুহ:
-
গল্প হলেও সত্যি (শেষ পর্ব)
১২ সেপ্টেম্বার ২০১৯ভিউ হয়েছে: 1212 -
So, if you wishing...
১৫ মার্চ ২০২৩ভিউ হয়েছে: 1163 -
নারী ও পুরুষ হোক পরস্পরের সহযোগী
১৭ জানুয়ারী ২০২১ভিউ হয়েছে: 1057 -
চন্দ্রগ্রহণে চন্দ্রাহত জীবন
৪ ফেব্রুয়ারী ২০২৩ভিউ হয়েছে: 1025 -
এটা কিসের ব্লগ?
১০ মার্চ ২০১৪ভিউ হয়েছে: 1016
অনলাইনে আছেন:
জনপ্রিয় ট্যাগসমুহ:
সম্পর্কিত ব্লগ

শুকনোপাতার কথামালা-৪
শুকনোপাতার রাজ্য
১৬ মে ২০২৫

শুকনোপাতার কথামালা-৩
শুকনোপাতার রাজ্য
১৯ মার্চ ২০২৫

শুকনোপাতার কথামালা-২
শুকনোপাতার রাজ্য
১৩ মার্চ ২০২৫

ফুলস্টপ!
শুকনোপাতার রাজ্য
২০ জানুয়ারী ২০২৫
লেখকের অন্যান্য ব্লগ সবগুলো দেখুন

অপেক্ষার মৃত্যু
উম্মে জয়নাব
৩১ মে ২০২১

পু্ঁচি ও পুচকির গল্প
উম্মে জয়নাব
৬ জানুয়ারী ২০২১

চাঁদোয়ায় কথোপকথন
উম্মে জয়নাব
৪ জুন ২০২০

নিশীথিনীর কথোপকথন
উম্মে জয়নাব
২৮ মে ২০২০
আপনার মতামত দিন:
(মন্তব্য পাঠকের একান্ত ব্যক্তিগত। এর জন্য কর্তৃপক্ষ দায়ী নন।)